রাত জাগলে কি কি ক্ষতি হয়?

বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাত্রায় অনেকেই প্রয়োজন কিংবা অভ্যাসবশত রাত জেগে থাকেন। কেউ পড়াশোনা বা কাজের চাপে, কেউ আবার বিনোদনের নেশায় রাত কাটিয়ে দেন। কেও আবার ফোন দেখে জাগেন।  
তবে নিয়মিত রাত জাগা স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। চলুন জেনে নি রাত জাগার কারণে কী কী ক্ষতি হতে পারেঃ
রাত জাগলে কি কি ক্ষতি হয়


১। ঘুমের ঘাটতি ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাসঃ

রাত জাগলে ঘুম কমে যায়, ফলে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে বিশ্রাম পায় না। ব্রেইন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে মনোযোগ কমে যায়, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। স্মৃতি ধারণ করার ক্ষমতা কমে যাই। পড়াশোনা মনে রাখার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাই।


 

 পেজ সুচিপত্রঃ রাত জাগলে কি কি ক্ষতি হয়ঃ- 

২।মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়ঃ

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানুষ সহজেই রেগে যায় বা বিষণ্নতায় ভোগে। রাত জাগার ফলে স্নায়ু দুর্বল হয় এবং মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। রাত জাগার ফলে মেজাজ  এতটাই খিটখিটে হয়ে থাকে যে মানুষের সাথে ঠুনকো বিষয় নিয়ে  ঝগড়া হয়ে যাই। রাত জাগার ফলে মেজাজ  খিটখিটে থাকার কারনে মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট  হয়ে যাই।

 ৩।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়ঃ

ঘুম আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। কিন্তু নিয়মিত রাত জাগলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, রক্ত চলাচল কমে যাই। শরীরের কোষ গুল দুর্বল হয়ে পরে। মেটাবলিজম কমে যাই, ফলে সহজেই সর্দি-কাশি, ইনফেকশন ইত্যাদি হতে পারে।


৪।ওজন বৃদ্ধি ও হজমে সমস্যাঃ



 জাগার কারণে দেহে যেসব পরিবর্তন হয় তা ওজন বাড়ার দিকে নিয়ে যায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:

(i) হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়

  • ঘ্রেলিন (Ghrelin) হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে।

  • লেপটিন (Leptin) হরমোন কমে যায়, যা সাধারণত আমাদের পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয়।

  • এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, বিশেষ করে ফাস্টফুড বা মিষ্টিজাত খাবার।

(ii) দেহের বিপাক ক্রিয়া (Metabolism) ধীর হয়ে যায়

রাত জাগার ফলে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, অর্থাৎ শরীর ক্যালোরি পোড়াতে কম সক্ষম হয়। এর ফলে ফ্যাট জমতে শুরু করে।

(iii) রাতের দিকের খাওয়া

রাত জাগলে অনেকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে রাত ১টা বা ২টার সময় খাবার খেয়ে থাকেন (late-night snacks)। এই সময়ে খাওয়া খাবার সহজে হজম হয় না এবং তা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে ওজন বেড়ে যাই।



রাত জাগা ও হজমে সমস্যা:

রাত জাগার কারণে হজমের প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে দেখা দিতে পারে নিচের সমস্যাগুলো:

(i) গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা

দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা বা রাতে ভারী খাবার খাওয়ার ফলে পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়।

৫।চোখ ও ত্বকের ক্ষতিঃ



রাত জাগলে চোখ লাল হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয় এবং চোখের নিচে কালি পড়ে। চোখ ছোট হয়ে যাই। চোখের মুনি ফ্যাকাসে হয়ে যাই। ত্বকও নির্জীব হয়ে পড়ে এবং ব্রণ বা র‌্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। শরীর খসখসে হয়ে যাই। ত্বকের সুন্দরযোতা নষ্ট হয়ে যাই।

৬।হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ 

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কম ঘুমান বা রাত জাগেন, তাদের হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

উপসংহারঃ

সুস্থ ও পরিপূর্ণ জীবনের জন্য পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত ঘুম অপরিহার্য। তাই সম্ভব হলে রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া এবং প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। শরীর ও মনের জন্য ঘুম একটি গুরুত্বপূর্ণ 'রিচার্জিং' প্রক্রিয়া, যা অবহেলা করা কখনোই উচিত নয়। স্বাস্থ্যই মানুষের আসল সম্পদ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url